বুক জ্বালাপোড়া? পেট ফোলা? গ্যাস ও অ্যাসিডিটির ঘরোয়া সমাধান

গ্যাস ও অ্যাসিডিটির কারণ ও প্রতিকার 

লেখা: স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি ডায়েরি 


পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবেশি সবারই হয়। মশলাদার খাবার খাওয়া, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মানসিক চাপ—এগুলো সবই গ্যাস ও অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। অস্বস্তিকর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ওষুধ খান, কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়েও এর সমাধান সম্ভব। আসুন জেনে নিই গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কী? কেন হয়? এবং এর সহজ ঘরোয়া প্রতিকারগুলো কী কী?


গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কী?

গ্যাস: পেটে গ্যাস হওয়া একটি সাধারণ হজমজনিত সমস্যা। আমরা যখন খাবার খাই, হজম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কিছু গ্যাস তৈরি হয়। অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হলে বা গ্যাস ঠিকমতো বের না হলে পেটে ফোলাভাব, ব্যথা, অস্বস্তি বা ঢেঁকুরের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 অ্যাসিডিটি: অ্যাসিডিটি বা অম্লতা হলো যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে। পাকস্থলীতে তৈরি হওয়া হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এই অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয় বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর সংযোগস্থলে থাকা পেশি ঠিকমতো কাজ না করে, তখন অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসে, যা বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেঁকুরের কারণ হয়। এই অবস্থাকেই অ্যাসিডিটি বলে।


কেন হয় গ্যাস ও অ্যাসিডিটি?

গ্যাস ও অ্যাসিডিটির পেছনে বেশ কিছু কারণ জড়িত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো:

খাদ্যাভ্যাস:

• মশলাদার, তৈলাক্ত বা ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া।

• নিয়মিত খাবার না খাওয়া বা অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা।

• অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি বা কার্বনেটেড পানীয় পান করা।

• কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যেমন - ডাল, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ছোলা ইত্যাদি গ্যাস তৈরি করতে পারে।

জীবনযাপন:

• অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ।

• পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

• ধূমপান ও মদ্যপান।

• খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া।

শারীরিক কারণ:

• বদহজম।

• পেটের আলসার।

• কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

আরো জানুন: ঘুম কেন দরকার? ঘুমের উপকারিতা, ঘুম না আসার কারণ ও প্রাকৃতিক সমাধান


গ্যাস ও অ্যাসিডিটির ঘরোয়া প্রতিকার:

গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজলভ্য ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর হতে পারে:


১. শসা

শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি পেটের প্রদাহ কমায় এবং গ্যাস ও অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহার: প্রতিদিন শসা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন বা শুধু শসা চিবিয়ে খেতে পারেন।


২. আদা

আদা হজমের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা জিঞ্জেরল নামক উপাদান হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহার: এক টুকরো আদা কুচি করে লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা এক কাপ গরম পানিতে আদা কুচি মিশিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন।


৩. জিরা

জিরা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং গ্যাসের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ব্যবহার: এক চামচ জিরা হালকা ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এবার এক গ্লাস পানিতে এই জিরার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। এছাড়া, রান্নার সময় জিরা ব্যবহার করতে পারেন।


৪. তুলসি পাতা

তুলসি পাতা অ্যান্টি-আলসার গুণসম্পন্ন এবং গ্যাস ও অ্যাসিডিটির লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহার: কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা গরম পানিতে তুলসি পাতা ফুটিয়ে চা হিসেবে পান করতে পারেন।


৫. দই

দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) হজমতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহার: প্রতিদিন খাবারের পর এক বাটি টক দই খেতে পারেন।


৬. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার পাকস্থলীর অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সহায়ক।

ব্যবহার: এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবার খাওয়ার আগে পান করুন।


৭. ঠাণ্ডা দুধ

ঠাণ্ডা দুধ অ্যাসিডিটির কারণে সৃষ্ট বুক জ্বালাপোড়া কমাতে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। দুধের ক্যালসিয়াম পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড শোষণ করে নেয়।

ব্যবহার: অ্যাসিডিটি হলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ আস্তে আস্তে পান করুন।


🚫 যে ভুলগুলো করা যাবে না

❌ খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে পড়া

❌ অতিরিক্ত চা/কফি পান

❌ দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া

❌ ধূমপান ও মদ্যপান

❌ খাবার না চিবিয়ে গিলে ফেলা

❌ পানি কম পান করা


💡 কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি সপ্তাহে ২-৩ বার এই সমস্যা হয়

দীর্ঘদিন বুক জ্বালা থাকে

ওষুধ ছাড়া আরাম না পাওয়া যায়

রক্তবমি বা কালো পায়খানা হয়

ওজন কমতে থাকে

👉 এসব ক্ষেত্রে দেরি না করে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নিন।


শেষ কথা

গ্যাস ও অ্যাসিডিটি সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা গ্যাস্ট্রিক, আলসার বা আরও জটিল রোগের কারণ হতে পারে। গ্যাস ও অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। তৈলাক্ত ও মশলাদার খাবার পরিহার করুন।

এই প্রাকৃতিক উপায়গুলো মেনে চললে আপনি অনেকটাই গ্যাস ও অ্যাসিডিটির অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারবেন ইনশা আল্লাহ্ । আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.